2024 সালের বাংলাদেশ কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল একটি উল্লেখযোগ্য গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ যা মূলত ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়। প্রথমদিকে, আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য কোটা ভিত্তিক ব্যবস্থার সংস্কার। তবে, সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ ও বিক্ষোভ দমন প্রচেষ্টার ফলে এটি একটি বৃহত্তর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরিণত হয়।
আন্দোলনটি শুরু হয় 2024 সালের জুন মাসে, যখন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য 30% কোটা পুনর্বহাল করে। শিক্ষার্থীরা এটিকে তাদের মেধার ভিত্তিতে সুযোগ সীমিত করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছিল। সরকার এই বিক্ষোভ দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। তারা ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনকে মোতায়েন করে এবং পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। দেশব্যাপী ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং গুলি-অ্যাট-সাইট কারফিউ জারি করে বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করা হয়।
সরকারি বাহিনীর কঠোর দমননীতির কারণে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। 2 আগস্ট পর্যন্ত 215 জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়, 20,000 জন আহত এবং 11,000 জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা 2000 থেকে 2500 এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হয়, কারণ সরকার তথ্য আদান-প্রদানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত এবং মৃতদেহ শনাক্ত ছাড়াই কবর দেওয়া হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এই আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা সহিংসতার জন্য সরকারের জবাবদিহিতা, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকরণ এবং নির্দিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
অসহযোগ আন্দোলনে পরিণত হওয়া এই আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে, যা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
0 Comments